বাংলাদেশে কোবিড -১৯ এর প্রভাব!!

বাংলাদেশে কোবিড -১৯ এর প্রভাব!!

 

কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও তার বিস্তার এখন আমাদের বাস্তবতা। মাসখানেক আগেও অনেকে যে সমস্যাকে মনে করেছিলেন চীনের বা ইতালির, তাঁদের ভুল প্রমাণিত করে আমাদের সবাইকে এ সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে এই ভাইরাস। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে করণীয় বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করছেন এবং সেই অনুযায়ী বিভিন্ন পরিকল্পনাও করছেন।

এ ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছি আমরা বাংলাদেশের সবাই। এই ভাইরাস যে প্রাণঘাতী, তা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে পরিষ্কার। এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো দেশের সরকার আর নীতিনির্ধারকদের মূল ফোকাস থাকে ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার নিয়ন্ত্রণ।

কিন্তু বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ রকম একটা মহামারির মাঝারি আর দীর্ঘমেয়াদি আর্থসামাজিক প্রভাব নিয়ে আগাম আলোচনা খুব একটা হয় না। এখনই সময় করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য নেতিবাচক আর্থসামাজিক প্রভাব মোকাবিলায় আগাম পরিকল্পনা গ্রহণের। অন্যথায় ভাইরাসজনিত রোগটির কারণে আমাদের যতটা না ক্ষতি হবে, তার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতির শিকার হবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এমনকি গত দুই দশকে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসা অনেক পরিবার আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।

★অর্থনৈতিক ক্ষতি: কারা সবচেয়ে বেশি ভুগবে? :-

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক সংক্রমণের প্রথম কয়েক মাসেই এটি পরিষ্কার যে সারা বিশ্ব আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে বাংলাদেশও যে এই বৈশ্বিক মন্দার শিকার হবে, তা অনুমেয়। আমরা ইতিমধ্যেই বিজেএমইএর সভাপতির কাছ থেকে জেনেছি যে প্রায় ১২ লাখ পোশাকশ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতি যদি আরও কয়েক মাস অব্যাহত থাকে, তাহলে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা তাও অর্জন সম্ভব হবে না । ফলে আমরা সবাই কমবেশি ভুগব। কিন্তু করোনাভাইরাসের এই চ্যালেঞ্জ সামলাতে যদি কারখানা স্থবির হয়ে যায় এবং শ্রমিকদের বেতন বন্ধ হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি ভুগবেন পোশাকশ্রমিকেরা (মধ্যবিত্তরা) । এঁদের প্রায় সবাই মাসিক বেতনের ওপর নির্ভরশীল। অধিকাংশ শ্রমিকেরই আপদ মোকাবিলার জন্য তেমন কোনো সঞ্চয় নেই, যা দিয়ে এই কঠিন সময় পার করছেন। ফলে জীবনধারণে চরম সংকটের মুখে পড়ছেন এঁদের সবাই। আর সবচেয়ে বেশি ভুগছেন ‘দিন আনে দিন খায়’ এ রকম খেটে খাওয়া মানুষেরা। এঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। ঢাকা শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হওয়ায় আমরা দেখছি মধ্যবিত্তরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস স্টক করতে, আর খেটে খাওয়া মানুষদের দেখছি আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার চিন্তায় অস্থির হতে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ-সংক্রান্ত অনেক খবর প্রচারিত হচ্ছে। এখন তো সারা দেশই লকডাউন ন্যায়সংগত কারণে। কিন্তু একজন রিকশাওলার সংসার কীভাবে চলবে যদি তাঁর প্রতিদিনের আয় বন্ধ হয়ে যায়? বাস চলাচল বন্ধ, এখন পরিবহনশ্রমিকেরা কীভাবে সংসারের খরচ চালাবে?

আমাদের অর্থনীতির একটা বড় অংশ অনানুষ্ঠানিক। হাটবাজারে ছোট পানের দোকান, নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করে এঁদের জীবন চলে। মানুষজন যদি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘর থেকে বের হতে না পারেন, তাহলে এঁরা কীভাবে পরিবারের সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন? কী ঘটবে গৃহকর্মীদের, যদি সংক্রমণ রোধে তাঁদের বাসায় ঢুকতে দেওয়া না হয়? এসব বিবেচনা করে বলা যায় যে দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি সংকটময় অবস্থায় রয়েছে।

★যেভাবে সরকারের অনুদান বন্টন করা উচিৎ এবং জনসাধারন হিসেবে আমাদের যা করা উচিৎ :-

কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে আমরা দেখছি সরকার স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করছে। আমাদেরও দ্রুত ভাবা উচিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা, ইতিমধ্যে তা করা হয়েছে কিন্তু বন্টনের জন্য যথাযত ব্যবস্থা করা হয়নি। এটা খুব দ্রুত করা না গেলে আমরা ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারি। একই সঙ্গে শুধু রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে না থেকে সামর্থ্যবান সবাইকে নিজেদের অবস্থান থেকেও দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের গাড়ির ড্রাইভারের দায়িত্ব আমাদের। এই আপত্কালীন অবস্থায় আমাদের গৃহকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক দায়িত্বও আমাদের। সবাই মিলেই এই কঠিন সময় পার করতে হবে।

এই সংকটে সরকারের ঘোষিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর বেশির ভাগই দেখা যাচ্ছে গ্রামকেন্দ্রিক। সরকার নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচির কথা বলছে। গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য খাদ্য সহায়তা আর নগদ অর্থ প্রদানের কথা সরকার ঘোষণা করেছে তার পরেও দেখা যাচ্ছে গ্রামের মেম্বার ও চেয়ারম্যনদের থেকে অধিকংশ মানুষ অবহেলিতো। কিন্তু শহরকেন্দ্রিক তেমন কোনো কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। অথচ এখন পর্যন্ত করোনার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক প্রভাব শহরেই বেশি।

সরকারের শহরকেন্দ্রিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এমনিতেই দুর্বল। এই সংকটকালে বস্তিতে থাকা স্বল্প আয়ের শহুরে জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ খুবই দরকারি। এরা এই লকডাউনের সময় গ্রামে চলে যাবে, এই ভাবনা বাস্তবসম্মত নয়। এরা ঘরে বসে থাকবে, তা চাইলে আপত্কালীন অবস্থায় এদের জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করতে হবে। যেসব উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান শহুরে দারিদ্র্য নিয়ে কাজ করছে, তাদের অবশ্যই এখন এদের পাশে দ্রুত দাঁড়াতে হবে। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়রদের এবং বংলাদেশ সেনাবাহিনী এসব উদ্যোগের কেন্দ্রে থাকতে হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোকে এবং বংলাদেশ সেনাবাহিনী এদের দায়িত্ব নিতে হবে।

শহরের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানই পারে স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাঁদের বের করতে এবং তাঁদের জন্য কী ধরনের কর্মসূচি দরকার তা সরকারকে অবহিত করতে। সরকার তখন পারে এসব কর্মসূচিতে অর্থায়ন করতে। নিজের শহরকে নিরাপদ রাখাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত।

About joy17

Check Also

ছাদে বাগান করলে ১০শতাংশ ট্যাক্স ছাড়

ছাদে বাগান করলে ১০শতাংশ ট্যাক্স ছাড়

ছাদে বাগান করলে ১০ শতাংশ ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী কিছু দিনের মধ্যেই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *