সত্যি বলতে ফেইসবুকে ব্যবসায় করা এটা আপনার নেওয়া অনেক ভালো একটা উদ্যেগ । ফেইসবুক ব্যবসাইয় এর বর্তমানে অনেক চাহিদা অনেক যা আগামি দিনে আরো অনেক বাড়বে । অনেকেই তো আমার ব্যবসায়টা করছে সেই জন্য আমার ব্যবসা হবে না, এইটা যদি আপনি ভেবে থাকেন তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন । কারন আপনার বাজারের দিকে আপনি লক্ষ্য করুন একই ধরনের ৫০/৬০টা দোকান আছে । আর সকলেই তো ব্যবসা করছে তো আপনার ব্যবসায় হবে না কেন? হ্যা হবে, কিন্তু সময় লাগবে আর সময়টা নির্ভর করে আপনার উপর বা আপনার কাজের উপর ।
যখন আপনি ফেইসবুকে কাজ করেন বলে ফেইসবুক পেইজ খুলেন, আপনার পরিচিতদের ইনভাইট করেন, কিছু লাইক করে আবার কিছু করে না । এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছুই নেই, সবাই তো আর সব কিছু পছন্দ করে না । আর আপনার টার্গেট হলো আপনার ব্যবসায়কে বড় করা, তাহলে শুধু পরিচিত নয় অপরিচিতদের টার্গেট করুন । কারন আপনার কাস্টমার সব সময় তারাই হবে ।
ফেইসবুক ব্যবসায় নিয়ে কিছু তথ্যঃ
পেইজ নাকি গ্রুপ?
সবাই নিজের ব্যবসায় টা শুরু করেন ফেইসবুক পেইজ দিয়ে কিন্তু আমি বলবো আপনি শুরু করেন ফেইসবুক গ্রুপ দিয়ে ।
কারন ফেইসবুক পেইজের মধ্যে শুধু মাত্র আপনি পোষ্ট দিতে পারবেন ।পেইজ হলো একমুখী প্রচারের মত । শুধুমাত্র আপনি বলবেন বাকিরা দেখবে । এর ফলে আপনি কাস্টমারের চাহিদা বা বর্তমানের চাহিদাটা আপনি জানতে পারবেন না ।
আর যদি গ্রুপ খুলেন, মনে করুন আপনি খাবার নিয়ে কাজ করেন তো আপনি একটা গ্রুপ খুলতে পারেন যেমনঃ আমার বেষ্ট খাবার / খাবার লাভারস আপনি যে কাজটা করবেন সেইটা রিলাটেড একটা নাম দিয়ে । তখন আপনার গ্রুপে তখন অনেকেই তার বেষ্ট খাবার পোষ্ট দেবে । তখন আপনি অন্যের পোষ্ট দেখেও আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। পেইজে আপনি একা কষ্ট করবেন গ্রুপে অনেকজন করবে । এর সাহায্যে আপনার গ্রুপটা বড় হবে খুব তারাতারি।
গ্রুপে মানুষ বেশি এক্টিভ থাকে কারন অনেক জন অনেক রকম পোষ্ট করে। তাই আপনি পোষ্ট করলেও সহজেই অনেকে দেখবে । আপনার সাথে অনেকের ভালো সম্পর্ক হবে । সম্পর্ক যত বাড়বে আপনার ব্যবসায়ের কাস্টমার তত বাড়বে
আর পেইজের লাইক বাড়ানো যতটা কঠিন, গ্রুপের মেম্বার বাড়ানো ততটা কস্ট না । পেইজ বানাবেন,এটা বানাতে মানা করছি না বা পেইজ খারাপ তাও বলছি না । শুরুটা গ্রুপ দিয়ে করেন ।
ডিজিটাল মার্কেটিংঃ
আপনার ব্যবসায়টা নির্ভর করে আপনার সেলস কত বা বিক্রয় কত আর আপনার সেলস নির্ভর করছে আপনার মার্কেটিং করার স্কিল কতটা ভালো । ফেইসবুক পেইজ এবং গ্রুপ চালানোর দক্ষতা খুব বেশি থাকা দরকার । ফেইসবুকের ছবির সাইজ স্কয়ার থাকা দরকার, ফেইসবুকের ভিডিও স্কয়ার হলে ভালো হয় । ফেইসবুকের ক্যাপশনে লিংক শেয়ার করলে রিচ কমে যায় ,তাই লিংকটা ক্যাপশনে না দিয়ে কমেন্টে ব্যবহার করুন । পোষ্ট করার পর প্রথম ১৫-২০ মিনিটে যত পারেন শেয়ার করেন । কারন প্রথমে যত বেশি ভিউ হবে ফেইসবুক এলগোরিদম ভাববে ভিডিওটা বা পোষ্টটা অনেক ভালো এবং আরো অনেক মানুষের কাছে পৌছাবে । অনেকে যে ভুলটা করে, পোষ্ট করার ১ঘন্টা পর আসে কমেন্টের উত্তর দিতে, ১ঘন্টা পর আসে শেয়ার করতে । এটা না করে, পোষ্ট করার সাথে সাথে শেয়ার করে দিবেন, কমান্টের রিপ্লে দিবেন । তাহলে যত বেশি এঙ্গেজমেন্ট বাড়ে তত বেশি পোষ্টের রিচ বাড়ে ।
গুগুল স্পেডশীটঃ
আমরা অনেকেই মাইক্রোসফট এক্সেল স্পেডশীট ব্যবহার করি । এটা না করে আপনি গুগুল স্পেডশীট ব্যবহার করুন এতে আপনার সুবিধা হলো আপনার প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য মোবাইলে না রেখে গুগুল ড্রাইভে ভিডিও রাখার মত । আপনার ব্যবসায়ের সকল তথ্য আপনারা স্পেডশীটে জমা রাখবেন । কাস্টমারের নাম, মোবাইল নাম্বার, ডিটেলস সব কিছু । কেন? অনেক কাজে দেবে । আপনার যে অর্থের হিসাব সব সময় কাজে দেবে, আপনার যে কাস্টমার লিস্ট সব সময় কাজে দেবে, আপনি কখন কোন কাস্টমারকে কি বিক্রয় করেছেন সব তথ্য সব সময় কাজে লাগবে । প্লীজ, ১০টা খাতা কলমে রাখবেন না, স্পেডশীটে রাখেন খুব সহজ হবে ।
(যদি আপনি গুগুল স্পেডশীট কিভাবে করতে হয় তা যদি না জানেন তাহলে কমান্টে জানাতে পারেন, কীভাবে খুব সহজে স্পেডশীট বানাতে হয় তার পোষ্ট করা হবে)
আপসেলঃ
আপনার সব তথ্য যদি আপনি স্পেডশীটের মধ্যে রাখেন তাহলে কি হবে জানেন? আপনি যখনই কোনো নতুন পন্য তৈরি করবেন এটা ক্রয় করার সব থেকে চান্স থাকবে আপনার স্পেডশীটে থাকা কাস্টমার গুলো । কারন তারা আপনার থেকে অলরেডি কিছু একটা কিনেছে । আপনার পন্যের প্রতি তাদের আস্থা আছে, তারা আপনার উপর বিশ্বাস করে তাই আপনি তাদের কাছে আপসেল করতে পারবেন । মনে করুন, আপনার ১টা পন্য ২০জন মানুষ ক্রয় করেছে, আপনার একটা নতুন পন্য মার্কেটে এসেছে, আপনার কাছে আগের ২০জন কাস্টমারের নাম্বার তো গুগুল স্পেডশীটে রয়েছে, আপনি ২০জন কে একটা মেসেজ করে দেন যে, ভাই আপনি তো আমার ওই প্রোডাক্টটা নিয়েছেন । আশা করি ভালো লেগেছে আমার নতুন একটা প্রোডাক্ট আসছে কিনতে চাইলে অর্ডার করুন । এই মানুষ গুলো আপনাকে চিনে, তারা জানে আপনার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি অনেক ভালো তাই তারা এক প্রোডাক্টি কিনার সম্ভাবনা অনেক বেশি ।
টিম বানানোঃ
বেশির ভাগ সবাই আপনারা নিজের পন্য নিজে তৈরি করেন, আবার আপনার পন্যের অর্ডার আপনি নিজে নেন, পন্যের মার্কেটিং ও আপনি নিজে করেন, ডেলিভারিও আপনি নিজে করেন ভেবে দেখেছেন আপনার নিজের উপর কতটা চাপ হয়? তাই যদি পারেন একটা টিম তৈরি করেন । যেমনঃ মার্কেটিং এর কাজ ১জন কে দিলেন, ডেলিভারির কাজ একজনকে দিলেন তাহলে দেখবেন আপনার অনেক সময় ও চাপ ২তাই অনেক কমে যাবে । এক্ষেত্রে আপনারা মনে করেন, মার্কেটিং এর একটা স্টুডেন্ট কে দিলেন, যে এই কাজ ভালো করতে পারে । তাহলে আপনার পণ্যের মার্কেটিং ভালো হবে, আর আপনার সেলও বাড়বে । তো আপনি ওই স্টুডেন্টকে সেলারি বা বেতন না দিয়ে তার সাথে কথা বলে কমিশন দিতে পারেন যে, তুমি যত টাকার সেলস আনবে তার ১০% বা ২০% লাভ তোমার । এক্ষেত্রে আপনি একজনকে কাজ দিচ্ছেন যে হয়তো এই সময় বেকার, অনেকেই এখন কাজ করতে সবার তো আর প্রোডাক্ট বানানোর ক্ষমতা নেই আপনার তো আছে । আপনার প্রোডাক্ট আছে তার মার্কেটিং করার স্কিল আছে তাই টিম আকারে কাজ করলে আপনার উপর প্রেশার কমে যায় আর আপনার ব্যবসায় ও বেরে যাবে ।
ট্রেড লাইসেন্সঃ
আপনার ব্যবসায় যখন একটা পর্যায় পর্যন্ত যখন যাবে ট্রেড লাইসেন্সটা করে নেবেন । আমি জানি, ট্রেড লাইসেন্স করা অনেক ঝামেলা । এর জন্য ১টা টিম করতে হবে, একটা অফিসের ব্যবস্থা করতে হবে আরো অনেক কাজ করতে হবে কিন্তু যখনই আপনার ব্যবসায় এর একটা ট্রেদ লাইসেন্স করবেন তখন দেখবেন আপনার মনের মধ্যেই একটা ভালো লাগা কাজ করবে, আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেবে, আপনার স্পিড অটোম্যাটিক বেরে যাবে ।
এটা যারা নতুন ব্যবসায় শুরু করেছেন তারা করবেন না, কাজ করতে করতে যখন আপনার ব্যবসায়টা একটু বড় হবে তখন করবেন ।