ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে রহস্যময় রোগ

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে রহস্যময় রোগ

 

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের এলুরু নামক এলাকায় রহস্যময় একটা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে গত শনিবার ,৫ই ডিসেম্বর থেকে । আক্রান্ত ব্যক্তিদের বমি বমি ভাব হচ্ছে এবং হঠাত করেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজন বলেছেন, তাদের চোখ জ্বালাপোড়া করছিল। এখন পর্যন্ত ৩০০ জন লোক এই রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন এক জন। (যিনি মারা গিয়েছেন ,তার মৃগী রোগ ও ছিল। )
সবচেয়ে প্রথম যেটা সন্দেহ করা হয় -সেই করোনার টেস্ট করা হয়েছে সবার। সবাই করোনা নেগেটিভ।
করোনাভাইরাসের মতই নতুন কোন ভাইরাস আক্রমন করেছে বলে অনেকে সন্দেহ করছিলেন। কয়েকজনের শরীর থেকে স্যাম্পল নিয়ে টেস্ট করা হয়েছে। নতুন কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
বায়ু দূষন বলে ধারনা করা হচ্ছিল, সেটাও নয়। অন্ধ্রের আকাশ এখন ক্লিয়ার। আশেপাশের কোনো ফ্যাক্টরি থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক বের হয়ে যায়নি ( ভূপাল বা চেরনোবিলের ঘটনা ঘটেনি এখানে এবার)
শহরের পানি সরবরাহ কেন্দ্র থেকে কোনোভাবে কোনো বিষ মিশে যেতে পারে বলে ধারনা করা হয়েছিল। সে পানিও টেস্ট করা হয়েছে, সবই নর্মাল।
লোকাল একটা কোম্পানির প্যাকেটজাত দুধ খেয়ে সবাই অসূস্থ হতে পারে- এমন আশংকা থেকে সেই দুধের স্যাম্পল নিয়ে টেস্ট করা হয়েছে। ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টের এক চিপায় সাংবাদিক লিখেছেন, Some believe that it is a case of mass hysteria. কোনো ডাক্তার বা বিজ্ঞানীকে তিনি কোট করেন নি।
তবে আমার মতে, এটাই সবচেয়ে সম্ভাব্য কারন। অন্ধ্র প্রদেশের ঘটনাটা মাস হিস্ট্রিয়ার সাথে মিলে যায় পুরাপুরি।
২.
মাস হিস্ট্রিয়া কি ?
যখন অনেক মানুষের একসাথে হিস্ট্রিয়া হয়, তখন সেটাকে Mass Hysteria বলে।
বাংলাদেশে মাঝে মাঝেই দেশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মাস হিস্ট্রিয়ার খবর পাওয়া যায়। সর্বশেষ, গত ২০১৯ এর ২২ জুলাই তারিখে কুমিল্লার সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। এদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ডাক্তাররা এদের রোগকে মাস হিস্ট্রিয়া নামক মানসিক রোগ হিসেবে শনাক্ত করেন।
গত ১০ বছরে কমপক্ষে ২০ টা এমন মাস হিস্ট্রিয়ার ঘটনা ঘটেছিল দেশজুড়ে। সবগুলাই – স্কুল/কলেজে কিংবা গার্মেন্টস কারখানায় । মাস হিস্ট্রিয়া ছাড়াও অনেক সময় একে মাস সাইকোজেনিক ইলনেস নামেও অভিহিত করা হয়।
কোথাও স্টুডেন্টরা ভূত দেখে ভয় পেয়েছে, কোথাও একটা বোমার আওয়াজ শুনে ভয় পেয়েছে, কোথাও ‘টয়লেটে জ্বিন আছে’ গুজব শুনেছে ,কোথাও লোকাল কবিরাজ ”বাণ মেরেছে” এমন গুজব শুনেছে, কোথাও কোনো কারন ছাড়াই, জাস্ট হাসতে হাসতে হিস্ট্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
সব কেসেই আক্রান্তরা দৃশ্যমান কোনো কারন ছাড়াই অজ্ঞান হয়ে গেছে। হাসপাতালে কয়েকদিন চাপমুক্ত পরিবেশে বিশ্রাম নিলেই সূস্থ হয়ে গেছে, মারা যায়নি কেউ ।
এই আর্টিকেলে প্রায় সবগুলো ঘটনার বিস্তারিত বিবরন পাবেন।
শুধু বাংলাদেশ , বিশ্বব্যাপীই এই মানসিক রোগটা মাঝে মাঝেই আবির্ভূত হয়। সেই ১৫১৮ সেঞ্চুরি থেকে শুরু। তখন ইংল্যান্ডে হঠাত করে অনেক মানুষ একসাথে নাচানাচি শুরু করে দেয়, আনকন্ট্রোলড ভাবে। অনেকে ভাবতেন ,ওদেরকে ভূতে আছর করেছে তাই ওরা এভাবে নাচতেছে । ব্যাপারটা তা নয়, ওরা মাস হিস্ট্রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
একই সময়ে, ফ্রান্সের গীর্জার কয়েকজন নান বিড়ালের মত মিউ মিউ করা শুরু করলেন। এ কথা ছড়িয়ে পড়লে দেখা গেল, পুরা ফ্রান্সের সব গীর্জার নানেরাই মিউ মিউ করা শুরু করেছে। কবিরাজের দাবি, ওদেরকে বিড়াল দেবতার আত্মা গ্রাস করেছে, আর ডাক্তারদের দাবি, এটা মাস হিস্ট্রিয়া নামক মানসিক রোগ।
১৯৬২ সালের ৩০শে জানুয়ারি তাঞ্জানিয়ার কাশাশার একটি স্কুলে একজন টিচার একটা জোক বলেছিল। মজা পেয়ে স্টুডেন্টরা হেসে দিল। কিছুক্ষন পরে সবার হাসি থামলেও ৩ জন এর হাসি থামেনি। তারা হাসতেই লাগল। তাদের দেখে অন্যরাও আবার হাসা শুরু করল। কিছুতেই তারা হাসি থামাতে পারছিল না। ওই ক্লাসরুমের হাসি তখন অন্যান্য ক্লাসের স্টুডেন্টদের মাঝেও সংক্রামিত হল। একসময় পুরো স্কুলের সব স্টুডেন্ট একসাথে হাসতে লাগল।
অনেকে দ্রুত সুস্থ হয়েছিল, কিন্তু অনেকের হাসি থামতে অনেক সময় লেগেছিল। সর্বোচ্চ ১৬ দিন পর্যন্ত কেউ কেউ হেসেছিলেন।এটা মাস হিস্ট্রিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরন।
উইকিপিডিয়ার এই লিস্টে কয়েকশো মাস হিস্ট্রিয়া কেসের বর্ননা আছে।
সবচেয়ে লেটেস্ট এন্ট্রিটা ইউক্রেনের, মার্চ ২০২০ এর। করোনাভাইরাসের গুজব শুনে ইউক্রেনবাসী রাস্তায় নেমে পাগলের মত ভাংচুর শুরু করেছিল তখন।
আপনার এলাকার আশেপাশে কোনো মাস হিস্ট্রিয়ার ঘটনা দেখেছিলেন নাকি ?

About regulartechbd

Check Also

ক্লাসে মনোযোগী হবার ৮টি সহজ উপায়!

ক্লাসে মনোযোগী হবার ৮টি সহজ উপায়!

ক্লাসে মনোযোগী হবার ৮টি সহজ উপায়!  সরিয়ে ফেলো মনোযোগ নষ্টের হাতিয়ার: আমাদের ক্লাসে মনোযোগী হবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *