বিড়ালের ছবি বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ডলারে?
একটি বিড়ালের ছবি বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ডলারে! ৫০০০ ছবির একটি কোলাজ বিক্রি হয়েছে ৬৯ মিলিয়ন ডলারে!
আসুন জেনে নেওয়া যাক বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটা ডিজিটাল টপিক এনএফটি (NFT) সম্পর্কে।
প্রথমেই বলে নিচ্ছি এই আর্টিকেলটা পড়ে হয়তো আপনার কোনো লাভ হবে না, তবে আপনার যদি নতুন জিনিস জানার প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই হতাশ হবেন না, বরং মজা পাবেন।
তো চলুন শুরু করি।
Fungibility / Fungible বলতে কি বোঝায়?
সোজা বাংলায় বললে, Fungibility হচ্ছে কোনো জিনিসের বিনিময় হওয়ার ক্ষমতা। আর fungible বলতে এমন কিছুকে বোঝায় যেটা সম মূল্যের এক বা একাধিক জিনিসের সাথে বিনিময় করা যায়।
তাহলে, যা বিনিময় করে ঐ জিনিসের সম মূল্যের এরকম কিছু পাওয়া সম্ভব নয় তাই Non-fungible।
ধরুন, আমার শিক্ষক আমাকে একটি ৫ টাকার কলম গিফট করেছেন। আমার কাছে এটার ভ্যালু কি বাজার থেকে কেনা ৫ টাকার কলমের সমান? আমি কি আপনার ৫ টাকার কলমের সাথে এই কলম বিনিময় করবো? অবশ্যই না। তাহলে এই কলমটা Non-fungible.
এনএফটি (NFT) কি?
NFT বা Non-fungible token হচ্ছে ব্লকচেইন নামক ডিজিটাল লেজারে থাকা এক ইউনিট ডাটা, যেখানে একটি NFT কেবলমাত্র একটি ইউনিক ডিজিটাল আইটেমকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। যেহেতু, ঐ জিনিসটা ইউনিক, ঐ জিনিসটার একটি মাত্র কপি-ই আছে, তাই জিনিসটার দামও বেশি। যেকোনো ডিজিটাল আইটেম যেমন: ছবি, অডিও, ভিডিও, অন্যান্য ডিজিটাল সৃষ্টিকর্ম ইত্যাদি NFT হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় করা যেতে পারে।
একদম সহজভাবে বললে, ডিজিটাল কোন আইটেমকে যদি সরকারি নোট ধরেন, তাহলে NFT হচ্ছে ব্যাংক নোট (যদিও, এদের বেশিরভাগ বৈশিষ্ট্য একে অপরের সাথে মিলবে না।)। যদি আপনার কাছে একটি ১০০০ টাকার ব্যাংক নোট (NFT) থাকে, তাহলে আপনি ১০০০ টাকা মূল্যের সরকারি নোটের মালিক। যারা সরকারি নোট এবং ব্যাংক নোটের পার্থক্য বোঝেন তারা এই পার্টটা বোঝবেন।
এনএফটি আগেও ছিলো, কিন্তু এখন জিনিসটা ট্রেন্ডিং। টুইটারে এলন মাস্ক এর মতো মানুষগুলো এটা নিয়ে টুইট করতে শুরু করলে টপিকটা ভাইরাল হয়ে উঠে। এমনকি, টুইট এর মতো জিনিস এখন মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হচ্ছে (বিস্তারিত পোস্টের শেষের দিকে)!
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যে ছবিটা আপনি অনলাইনে বিক্রি করবেন সেটা তো আমি ফ্রিতে ডাউনলোড করে আমার ফোনে রেখে দিতে পারি, তাহলে আমি এটা টাকা দিয়ে কিনবো কেনো?
আপনি ডাউনলোড করে রেখে দিলেই ত আর ঐ ছবির মালিক হয়ে যাবেন না, তাই নয় কি? ঐ ছবির মালিকানা লাভ করতে হলে আপনাকে ছবিটা কিনতে হবে। তখন যে ছবিটা কিনবে তারটা হবে আসল, আর আপনি যেটা ডাউনলোড করে রেখে দিছেন সেটা নকল!
প্রতিটি NFT ই ব্লকচেইনে “মিন্ট” করা আছে। যখন কেউ ডিজিটাল কোন কিছুর NFT কিনবে, তখন ঐ ডিজিটাল জিনিসটা ক্রেতার মালিকানায় চলে যাবে।
কিভাবে NFT ক্রয় বিক্রয় করবো?
আপনি যে ডিজিটাল জিনিসটিকে NFT হিসেবে বিক্রি করতে চান, সেই ফাইলটি কোন একটি NFT অকশন মার্কেটে (OpenSea, Rarible, KnownOrigin) আপলোড করতে হবে। তখন তারা আপনার ফাইলটি ব্লক চেইনে মিন্ট করে দিবে বা আপনার জিনিসটির জন্য একটি Non fungible token তৈরি করে দিবে। তখন ঐ NFT কেউ ইথেরিয়াম এর বিনিময়ে ঐ মার্কেটপ্লেস থেকে কিনতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট ফাইলটি ক্রেতার মালিকানায় চলে যাবে। ক্রেতা চাইলে NFT টি আবার বিক্রি করতে পারবে।
NFT এর উপকারিতা কি?
NFT এর মাধ্যমে আপনি আপনার ডিজিটাল আর্টের ভ্যালু পাচ্ছেন, মালিকানা বিক্রি করতে পারছেন, যারা আর্ট কিনবে তারা আর্টিস্টের কাছ থেকে অরিজিনাল এবং অথরাইজড আর্ট পাচ্ছে, এটাই হচ্ছে NFT এর মূল উপকারিতা। কোন ডিজিটাল আইটেমের মালিকানা পেতে হলে আপনি ঐ আইটেমের NFT কিনে নিবেন, ব্যাস! আপনি এর মালিক হয়ে যাবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভবিষ্যতে ঐ আইটেম যতবার রিসেল হবে, ততবারই এর প্রথম মালিক বা ক্রিয়েটর পার্সেন্টেজ পাবেন।
বোনাস পার্ট- NFT হিসেবে টুইট বিক্রি:
সম্প্রতি টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা Jack Dorsey এর প্রথম টুইট ২.৯ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে! এই পোস্ট যখন লেখা হচ্ছে, তখন এলন মাস্কের একটি টুইট ১.১ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিড করা হয়েছে!
আজব না? মানুষ এতো টাকা দিয়ে টুইট কিনে করবেটা কি?
বলতে গেলে এটা একপ্রকার বিলাসিতা। Jack এর প্রথম টুইট বা এলন মাস্ক এর টুইট – এগুলো কিন্তু ইউনিক, এর দ্বিতীয়টা নেই। তাই এটা নন ফাঞ্জিবল। একজন ঐ টুইট একবার কিনে নিলে, দ্বিতীয় কেউ এর মালিক হতে পারবে না। ক্রেতা বলতে পারবে, “এলন মাস্কের এই টুইট এর মালিক আমি”, জ্যাক এর প্রথম টুইট আমার”। টুইট কিনার পিছনে এটা হতে পারে একটি কারণ।
আবার, দেখা গেলো অন্য কেউ আরো বেশি দামে জ্যাক এর প্রথম টুইট কিনতে চায়। তখন প্রথম ক্রেতা চাইলে এর থেকে লাভ করতে পারবে। এটাও আরেকটা কারণ।
আমার টুইট বিক্রি করতে পারবো?
বিক্রি তো অবশ্যই করতে পারবেন, মার্কেটপ্লেস আপনার জন্য খোলা, কিন্তু কিনবেটা কে? আপনি তো আর এলন মাস্ক নন।
কেউ যদি আমার কোনো টুইট কিনে তাহলে সে কি এটা দেখিয়ে বিলাসিতা করতে পারবে? যে এটা মারজান এর টুইট? অবশ্যই না। কারণ মারজান ঐ লেভেলের কেউ না, কেউ তাকে চিনে না!
বাংলাদেশ থেকে NFT ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে?
দুর্ভাগ্যবশত: ক্রিপ্টো কারেন্সি বাংলাদেশে অবৈধ! NFT হচ্ছে Ethereum, Bitcoin Cash বেজড টোকেন। আর Ethereum, Bitcoin Cash এগুলো একেকটা ক্রিপ্টো কারেন্সি।
তাই, বাংলাদেশ থেকে আপনি NFT বাই সেল করতে পারবেন না, ইলিগ্যাল ওয়েতে করে যদি ধরা পড়েন তাহলে জেলের ভাত খেতে হবে! যার দায় আপনি ব্যতীত আর কেউ নিবে না!
NFT জিনিসটাই জোস!
Blockchain বেশি জোস!
©
Ahmed Marjan