জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
সবকিছু ঠিকঠাক মত চললে এ বছর ৩১ অক্টোবর আমরা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মহকাশে পাঠাব। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল টেলিস্কোপ এটি (এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার)।
—
কিন্তু এত বিশাল পারিমাণ টাকা ব্যয় করে কেন আমরা পাঠাব এটাকে মহাকাশে? উত্তর হচ্ছে, আমরা দেখতে চাই, বুঝতে চাই এবং বিশ্লেষণ করতে চাই যে, আমাদের এই পৃথিবী, সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সিগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছিল এবং তৈরি হচ্ছে।
—
হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যায় না? না, পুরাপুরি যায় না। সে কম শক্তিশালী। বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে। তার চোখের পাওয়ার জন্ম থেকেই কম। তাই প্রয়োজন নওজোয়ান, অধিক চোখের পাওয়ারযুক্ত একটি টেলিস্কোপ। সেটি-ই হচ্ছে, জেমস ওয়েব। অনেক সখ করে, অনেক আশা নিয়ে আমরা বহু বছর ব্যয় আর বহু টাকা খরচ করে তাকে তৈরি করেছি। আশা করি, এ বছর-ই ৩১ অক্টোবর তাকে আমরা তার স্থায়ী ঠিকানায় পাঠাতে পারব।
—
চোখের পাওয়ার অধিক শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজন ক্ষীণ আলো (ইনফ্রারেড) দেখার সক্ষমতা অর্জন। আমাদের চোখ এই ক্ষীণ আলো দেখতে পায় না। আমাদের মোবাইলের ক্যামেরা কিছুটা এই ক্ষীণ আলো দেখতে পায়। টিভি বা এসির রিমোট কন্ট্রোলের বাটন টিপ দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে আপনিও এ আলো দেখতে পাবেন (আজই ট্রাই করুন)।
—
জেমস ওয়েবকে তৈরি-ই করা হয়েছে এই ক্ষীণ আলো দেখার জন্য।
—
আমাদের সূর্যের মত আরো অগণিত নক্ষত্র , আমাদের পৃথিবীর মত আরো অগণিত গ্রহ অতীতে তৈরি হয়েছে। বর্তমানেও তৈরি হচ্ছে।
বর্তমানে তৈরি হচ্ছে যেখানে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এগুলোকে নেবুলা বলে। হাবল টেলিস্কোপ বহু নেবুলার ছবি তুলেছে।
—
এরূপ একটি নেবুলার নাম ঈগল (Eagle Nebula)। নিচের এই ঈগল নেবুলার একটি অংশের দু’টি ছবি দিলাম। দু’টি ছবি-ই তুলেছে হাবল (এগুলো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এডিট করা)। একটি ছবিতে ঐ অঞ্চলে তারকা দেখা যাচ্ছে না। কারণ নেবুলার অঞ্চলের ধুলার বিশাল মেঘ বা স্তুপ দৃশ্যমান আলো আসতে দেয় না। তাই হাবল তার স্বাভাবিক চোখ দিয়ে সে নক্ষত্রগুলো দেখতে পাচ্ছে না।
অপর ছবিতে ঐ অঞ্চলে অনেক তারকা দেখা যাচ্ছে। এবার হাবল তার একটু বিশেষ চোখ ব্যবহার করে কিছুটা ইনফ্রারেড (Near infrared) আলো দেখেছে। আর অবাক হয়ে দেখতে পেয়েছে ধুলার মেঘে ঢেকে থাকা অনেক তারকা।
জেমস ওয়েবকে আমরা তৈরি-ই করেছি ইনফ্রারেড আলো দেখার জন্য। কাজেই সে যখন তার নির্ধারিত স্থানে গিয়ে তার শক্তিশালী সে চোখ খুলে আমাদের এই মহাবিশ্বের দিকে তাকাবে তখন যেমন আশ্চর্য হবে যে তেমননি আশ্চর্য হব আমরা। কাজেই অপেক্ষায় থাকুন সে-ই দিনটির জন্য।
—
পরিশেষে আরেকটি তথ্য বলে আপাতত শেষ করছি। জেমস ওয়বকে যে স্থানে বসানো হবে সেটি আমাদের পৃথিবী থেকে দশ লক্ষ মাইল দূরে। চাঁদ যতটুকু দূরে তার চেয়ে চার গুণ বেশি দূরে। কেন ঠিক ঐ স্থানটিতে-ই তাকে আমাদের পাঠাতে হবে? সে আরেক গল্প। সময় সুযোগ হলে আরেক দিন শোনাব। সকলে ভাল থাকুন। আমার জন্য দোয়া করবেন।
—
হাবীবুল্লাহ বিন আব্দুল হক।