জলমানব
একটি মেয়ে ছোট্ট নৌকায় ভাসছে। দিনের পর দিন ভেসে চলেছে এক জলমানবের খোঁজে, যার নাম নিহন। কাটুস্কা নামের স্থলমানবী খুঁজে চলেছে সমুদ্রে বাস করা অপরূপ এক কিশোরকে, যার কাছে গিয়ে সে অন্তত একদিনের জন্য হলেও জলমানবী হতে চায়।।
এই যে স্থলমানব আর জলমানবের বিভাজন, এটি শুরু হয়েছিল প্রায় দুইশত বছর আগের এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে যখন পৃথিবীর সিংহভাগই তলিয়ে যায় জলের নিচে। সে সময় একদল মানুষ উঁচু জায়গা বা পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিল আর বাকিরা নৌকায় ভেসে ছিল। খাবার আর বাসস্থানের সল্পতার জন্য স্থলবাসীরা জলের মানুষদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। তাদেরকে বন্য, অসভ্য বলে বঞ্চিত করা হয়। এরপর স্থলবাসীরা দিনে দিনে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটায় এবং এমন পর্যায়ে পৌঁছালো যে তাদেরকে আর নিজেদের মস্তিষ্ক খাটিয়ে কিছু করতে হয় না,, সিদ্ধান্ত, বিদ্যাবুদ্ধি সবই কোয়ান্টাম কম্পিউটার এর দখলে। যার ফলে তরুণ সমাজ হয়ে পড়ে কৌতুহলশূন্য, নিরানন্দ এবং আত্মহত্যাপ্রবণ। তাদের শেখার কোনো ইচ্ছে নেই, নেই কোনো সৃজনশীলতার মানসিকতা কারণ সবই তাদের হয়ে কম্পিউটার করে দেয়। তাদেরকে কোনো কিছুই আনন্দ দিতে পারে না, তাই তাদের জন্য বিশেষ পানীয় তৈরি করতে হয়, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স তৈরি করে মস্তিষ্ককে ফূর্তি দিতে হয়, এমনকি বিনোদনের জন্য সমুদ্রে গিয়ে জলমানব শিকার করারও অনুমতি রয়েছে।
অপরদিকে জলমানবেরা স্থলমানবদের মত এতো উন্নত যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারে নি কিন্তু তারা পরিশ্রমী, উদ্যোমী। তারা নিজের মস্তিষ্ক খাটিয়ে কাজ করে, টাইফুন থেকে বাঁচার জন্য ভাসমান দ্বীপকে ডুবিয়ে রেখে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে, সামুদ্রিক শৈবাল থেকে আলো তৈরি করতে পারে, কাপড় বুনতে পারে, তিমির সাথে কথা বলা এবং তিমির পিঠে উঠে সমুদ্রে ঘুরতেও শিখে গেছে তারা। পরিশ্রমের ফলে তাদের সুঠাম দেহ, তারা পরস্পরকে ভালোবাসতে জানে, একবাক্যে দলপতিকে বরণ করে নিতে পারে। এই জীবনে আছে প্রশান্তি, মানবিকতা আর স্থলমানবদের এতো প্রযুক্তির পরও আছে একরাশ নিরানন্দ যান্ত্রিক জীবন। কোনটি উত্তম??
কাটুস্কারা জলমানব শিকার করতে আসলে ঘটনাক্রমে নিহন তাদের হাতে ধরা পরে যায় এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটারের নির্দেশে তাকে অ্যাকোরিয়ামের ভিতরে দুইটি ক্ষুধার্ত হাঙ্গরের মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় যেন সেই দৃশ্য দেখে তরুণ সমাজ আনন্দ পায়। হায় রে প্রযুক্তি! কি হবে এতো উন্নত যন্ত্রপাতি দিয়ে যদি মানবিকতাই না থাকে?? যাহোক, নিহন সেখান থেকে নিজেকে মুক্ত করে কাটুস্কার সহায়তায়। তখন তাদেরকে বন্দি করা হয় একটা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ঘরে, সেখান থেকেও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে নিহন মুক্ত করে নিজেদেরকে এবং ফিরে আসে নিজের জায়গায়।
যান্ত্রিক জীবনকে ছুঁড়ে ফেলে এক অনাবিল আনন্দময় মানবিক জীবনে ফেরার আকুতি কাটুস্কাকে ব্যাকুল করে ফেলে। সেও হতে চায় নিহনদের মত একজন। তাই এক ছোট্ট নৌকায় একাই পাড়ি জমিয়েছে সমুদ্রে। সে কি পারবে নিহনের কাছে পৌঁছাতে?? কি হবে তার পরিণতি?? সেটাতো বই পড়লেই জানা যাবে।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের জলমানব বইটি সভ্যতা আর প্রযুক্তির কাছে মানবিকতার প্রশ্ন রাখে।।
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল
ধরনঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
সময় প্রকাশন
মূল্যঃ ১৬০ টাকা