কত মানুষের ঘটনা আমরা শুনেছি, যে মৃত্যুর সময় গুনার কারণে তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছেল। মৃত্যুর পরবর্তী মুহূর্তে গুনার কারণে তাদের কবর জাহান্নামের গর্তে পরিণত হয়েছিল।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মাজীদ এরশাদ করছেন
যদি তুমি সেই অবস্থা দেখতে যখন ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবজ করে, যখন তাদের মুখ ও পশ্চাদ্দেশে আঘাত করে করে বলতে থাকে নাও জ্বলন্ত আজাদের সাজা সাধন করো। এটা হচ্ছে সেই সব কৃতকর্মের প্রতিদান যা তোমরা পূর্বে পাঠিয়েছো। আর আল্লাহ তাআলা বান্দার উপর জুলুম করেন না।
বর্ণিত আছে, যে একবার এক বাদশাহ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দীর্ঘ সময় লাগিয়ে একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মাণ করলো, পৃথিবীর সকল দামি দামি পাথর দিয়ে প্রাসাদটি কে সুসজ্জিত করা হলো। অতঃপর প্রাসাদের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর সাত দিন লাগিয়ে পুরোশহরে ঘোষণা করা হলো যে অমুক দিন বাদশার নতুন প্রাসাদ উদ্বোধন করা হবে। সুতরাং তোমাদের সকলের আমন্ত্রণ রইল। উদ্বোধনের দিন তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি বাদশার প্রাসাদ এর নির্মাণ কাজে ভুল ধরিয়ে দিতে পারে, অথবা প্রাসাদের নির্মাণ শিল্পের কোন খুদ ধরিয়ে দিতে পারে তাহলে তাকে মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে।
অতঃপর উদ্বোধনের দিন সকল মানুষ উপস্থিত হল। উদ্বোধন শেষে সকলে ঘুরে ঘুরে পুরোপ্রাসাদটি পরিদর্শন করলো কিন্তু প্রাসাদটি এত নিখুঁত করে বানানো হয়েছিল কেউ কোন খুত বের করতে পারলো না। সেই সময় এক মুত্তাকী ব্যক্তি প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি অনেক মানুষের সমাগম দেখে , তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে এখানে কি হচ্ছে ? লোকেরা বলল বাদশা নতুন প্রাসাদের উদ্বোধন করেছে এবং ঘোষণা দিয়েছে যদি কেউ এই প্রাসাদের খুত বের করতে পারে, অথবা প্রাসাদের কোন সমস্যা দেখাতে পারে তাহলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে
তখন সে আল্লাহ ভীরু লোকটি প্রাসাদের সামনে যেয়ে বাদশাকে ডাক দিয়ে বললেন। হে বাদশা আপনার নবনির্মিত প্রাসাদে প্রবেশের পূর্বেই আমার চোখে এই প্রাসাদের বড় বড় দুটি সমস্যা ধরা পড়েছে । বাদশা এবং প্রাসাদের সামনে অবস্থানরত সকলই কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করল সমস্যা দুটি কি কি? তখন সে আল্লাহ ভীরু লোকটি উঁচু আওয়াজে চিৎকার করে বললো
- ১)প্রথম সমস্যাটি হচ্ছে এই প্রাসাদ একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।
- ২) দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে এই প্রাসাদের মালিককেও একদিন এই বিলাসবহুল প্রাসাদ থেকে অন্ধকার কবরে রেখে আসা হবে।
এ প্রাসাদের মালিকেও একদিন এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হবে। জেনে রাখো আল্লাহ ব্যতীত পৃথিবীর সব কিছুই নিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, মুছে যাবে সুখ ও সমৃদ্ধির শেষ চিহ্নটুকু
সুফিয়ান আচ্ছাওরি রাহমাতুল্লাহ বলেন:-
যে ব্যক্তি কবরের জীবন নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করবে এবং কবরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিবে, তার কবর তার জন্য জান্নাতের বাগানে পরিণত হবে। আর যে ব্যক্তি কবরের জীবনকে ভুলে যাবে, কবরের জন্য প্রস্তুতি নিবে না, তার কবর তার জন্য জাহান্নামের একটি গর্তে পরিণত হবে।
আল্লাহ ভীরু লোকদের জিজ্ঞেস করা হলো। সবচেয়ে বড় উপদেশ কি? তারা জবাব দিলেন সবচেয়ে বড় উপদেশ হচ্ছে কবরস্থানের যেয়ে মৃত ব্যক্তিদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
এক লোক ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করলো আমি আমার শক্ত হৃদয়কে কিভাবে বিগলিত করব? ইমাম আহমদ বিন হাম্বল জবাব দিলেন তুমি যদি তোমার হৃদয়কে বিগলিত করতে চাও তাহলে কবরস্থানে যেয়ে বসে থাকো। এবং মৃতদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করো।
জনৈক সালাব বলেন:-
কখনো যদি আমি আমার হৃদয়ের কাঠিন্যতা অনুভব করি তাহলে আমি কবরস্থানে চলে যাই এবং কবরের অধিবাসীদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করি
রাসূল (সা:) কতই না উত্তম উপদেশ দিয়েছেন:-
আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে বারণ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত করো, এখন থেকে তোমরা বেশি বেশি করে কবর জিয়ারত করো, নিশ্চয়ই কবর তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।
প্রিয় ভাইয়েরা কবরস্থানে যাও ,জুতো খুলে কবরস্থানে প্রবেশ করো। কবরগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে কবর স্থান পরিদর্শন করো। তুমি সেখানে দেখতে পাবে ছোট-বড় ধনী-গরিব আমির ফকির সকলেই একই অবস্থানে শুয়ে আছে। সকলকেই সাদা কাপড় পরিয়ে মাটি চাপা দিয়ে রেখে আসা হয়েছে। শুধুমাত্র নিজেদের কৃত কর্ম ছাড়া তারা কেউই কারো সাথে কোন কিছু নিয়ে যেতে পারেনি।
যাও তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা এই কবর তোমাদের আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।
সমাপ্ত